logo

ট্রেড ইউনিয়ন নেতা আব্দুর রহমান রুমীর করোনাকালে বিপরীত প্রতিক্রিয়া

করোনাকালে বিপরীত প্রতিক্রিয়া
আব্দুর রহমান রুমী

গত মে মাসের ০৭/০৮ তারিখ রমজানের মধ্যে আমি তখন ঢাকায় ছেলের বাসায়। প্রচন্ড করোনা আতন্কের মধ্যে হঠাৎ একদিন আমার প্রচন্ড জ্বর উঠলো। সাথে হাতের তালু,পায়ের তলায় প্রচন্ড জ্বলন্তি। এর সাথে লুজ মশান মানে পাতলা পায়খানা, হালকা না মারাত্বক । করোনার বেশ বড় দুটো উপসর্গ। মনে মনে ভাবলাম, কামটা কি হয়েই গেল কিনা।যদিও হওয়ার মত কোন কারন নাই, কারন থাকেতো করোনাকে সেধে সোধে আনতে হয়, স্বাগত না জানালে তিনি নিজের থেকে আসেন না।তাই ভিতরে ভিতরে বিশ্বাস ছিল যে, আমি তাইনের দ্বারা আক্রান্ত না। তবে বলাতো যায় না তিনি যদি জ্বীন পেত্নীর মতো আমি যখন বাসার সামনে ডায়বেটিস জনিত কারনে হাটাহাটি করতাম, তখন যদি আমাকে দেখে থাকেন, আর আমাকে পছন্দ করে কোনভাবে আছড় করে থাকেন। তাহলে তো হলে হতেও পারে।যদিও আমার প্রচন্ড বিশ্বাস ছিল- জ্বরটা আমার এমনি এমনি।
আমি একরুমে একাই থাকতাম, পাশের রুমে আমার মাও একরুমে একাই থাকতেন।অন্যান্য রুমে ছেলে, বউ নাতি থাকতো।
আমি কি করলাম, মাাকে আমার রুমে, আমার বিছানায় ডেকে নিয়ে আসলাম। আমি যা ভাবলাম,
যদি আমার করোনা হয়েই থাকে তাহলে আমি মারাও যেতে পারি, তাহলে ৯০ বছর বয়সী মা’রও হউক। মরতে হয় মা পুত দুজনই মরি।তাই আমার মাকে আমার কাছে আমার বিছানায় নিয়ে আসার জন্য আমি মাকে বললাম, আমি যদি মরে যাই আর আপনি যদি বেঁচে থাকেন, তাহলে আপনার তো কিছু কষ্ট হতে পারে, সেটা অনেক ভয়ানকও হতে পারে।আমি মাকে জিজ্ঞাসা করলাম আমি মরে গেলে আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন না! এইরূপ নানা আলাপ।এইগুলো বললাম সম্ভবত জ্বরের মানুষ একটু ইমোশনাল হয়ে পড়ে। এছাড়া সত্য যে কাহিনী তা হলো, আমার আগে ২০০৯ সালে মার খুব প্রিয় পুত্র আমার ছোট ভাই কবি নূরে মালেক মজিব এবং মার আরো দুই পুত্রবধু ২০১৬ এর পরে অল্পবয়সে মার হাতেই মারা গেলেন। এখন আবার করোনায় আমি মারা গেলে মা বেঁচে থাকলে সেটা আরো বেশী কষ্টকর হবে এবং আমার মার জন্য সেটা অপয়ার অপবাদও জন্ম দিতে পারে। তাই মাকে কিছুটা ক্ষেপিয়ে তুললাম এই বলে যে, আমার যদি করোনা হয়ে থাকে তবে আমি তো মরেও যেতে পারি, আপনি কাছে আসলে আপনিও মরতে পারেন। কাজেই আপনে দূরে থাকেন।তখন দেখলাম মা একেবারে কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। আমি মনে মনে খুশী কারন আমি এটাই চাইছিলাম। আমার জ্বর হলে একটু চিল্লাচিল্লি করার অভ্যেস আছে। এ সময় কাউকে না কাউকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছা করে। মা যখন আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখছিল আমি বেশ উম পাচ্ছিলাম।

অন্যদিকে আরেকটি জায়গায় আমি ১০০% ফেল মারলাম। করোনা হতে পারে এই আশংকায় আমি আমার ছেলে, তার ছেলে অর্থাৎ আমার নাতী এবং আমার বউ মা, তারা আমার কাছে বা আমার রুমে না আসুক সেটা মন থেকে চাইছিলাম, তাদেরকে আমি সরাসরি না করলাম যেন তারা আমার রুমে না আসে। কিন্তু তারা আমার নিষেধ অমান্য করে একটু পর পর আমার রুমে এসে আমার খোজ খবর নিচ্ছিল এবং আমার সেবা-যত্ন করছিল,আমাকে ঔষধ খাওয়াচ্ছিল যা আমি একেবারেই চাইনি।আমার অসুখের ব্যাপারে ছেলে সার্বক্ষণিক ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখছিল। ছেলে অফিসে গেলে বউমা খোঁজ খবর দিচ্ছিল এবং কখন কোন ঔষধ খাব তা বাতলিয়ে দিচ্ছিল।
তবে বাসার কাজের মেয়েরা কিছুটা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে সতর্কতার সাথে আমার সেবা যত্ন করছিল।
আমার মেজো ছেলে আমার অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে উত্তরা থেকে পরো লকডাউন এর ভিতরে নানা ফাঁকফোকর গলিয়ে করুণা ঝঁকির মধ্যে আমার কাছে চলে আসলো। আমার আরেক বউ মা এবং ছোট ছেলে সর্বক্ষন ফোন লাগিয়েই রাখতো।এখানে তাদেরকে দূরে রাখতে নিরাপদ রাখতে চেয়েও আমি সম্পূর্ণ ভাবে ফেল মারলাম।
অতপর তিনদিন পর আমি সুস্থ হয়ে উঠলাম।এরই মধ্য আমার এবং আমার ছেলে নিজেরও করোনা টেষ্ট করানো হল। অনেক ভয়ের মধ্য করোনা টেষ্টের ফলাফল নেগেটিভ এলো।
করোনা আতংকের মধ্যে আজ অনেক রকম নিষ্ঠুর,নির্দয়, অমানবিক কাহিনী যেমন শুনছি, তেমনি আজো ফেইসবুকে একটা ছবি দেখলাম বৃদ্ধ পিতা অসুস্থ পুত্রকে বুকে আগলিয়ে রেখেছেন।
দেখেছি, বিচার বিভাগে কর্মরত স্ত্রী ছোট শিশুকে ঘরে রেখে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরনকারী চিকিৎসক স্বামীর শবদেহের সৎকার করতে।
নিজের জীবন থেকেও দেখলাম অনেক কিছু।বৈচিত্র্যময় এই ধরায় নানান ঘটনা ঘটবে, তবে এক্ষেত্রে পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা, মূল্যবোধ এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাই রাষ্টকেও মানবিক আচরণ করতে হবে, তাহলেই রাষ্টের জনগণও নিশ্চয় সহজে পথহারাবে না।
রাষ্ট্র অনৈতিক, অমানবিক, স্বৈরতান্ত্রিক কার্যক্রম করলে জনগণ ভুলপথে পা বাড়াতে পারে, বিষয়টি রাষ্ট্রের বিবেচনায় রাখা উচিত, একই সাথে জনগণকেও বিবেচনায় রাখতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার কার হাতে দিলে রাষ্ট ও জনগন সঠিক পথে এগুতে পারবে।

Comments are closed.







প্রধান সম্পাদক : ফজলুল হক জোয়ারদার আলমগীর, সহ-সম্পাদক : দেলোয়ার হোসেন শরীফ।
বার্তা সম্পাদক - মাসুম পাঠান, প্রধান কার্যালয়: ১৩/এ মনেশ্বর রোড, হাজারিবাগ, ঢাকা- বাংলাদেশ।
জোনাল অফিস: বাংলাদেশ কম্পিউটার এন্ড টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, কটিয়াদী বাজার (অগ্রনী ব্যাংক নিচতলা), কিশোরগঞ্জ।
ফোন : ০১৭১১-১৮৯৭৬১, ০১৭১১-৩২৪৬৬০, ০১৭৩২-১৬৩১৫৭।
ই-মেইল: news@ghatanaprobaha.com, ওয়েবঃ- www.ghatanaprobaha.com
ডিজাইন: একুশে