logo

ছিন্নমূল শিশুর ভালোবাসা ‘জুম বাংলাদেশ স্কুল’

দেলোয়ার হোসেন শরীফ:  আজকের শিশু, আগামীদিনের ভবিষ্যত। ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিনিয়তেই বাড়ছে এসব পথ শিশুর সংখ্যা। সঠিক জরিপের অভাবে বলা কঠিন এদের সংখ্যা কত। ঢাকা শহরে অনেক সংস্থা আছে যারা পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। এমনি একটি সংস্থা হচ্ছে এভারগ্রীন জুম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। শিশুদের জন্য আমরা একটি সাজানো বাগান চাই। প্রতিটি শিশু গড়ে উঠুক তার প্রাপ্য নিয়ে। রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হোক কোনো শিশু। কেননা তাদের মাঝেই লুকিয়ে অফুরন্ত প্রতিভা। কিন্তু দেশের ছিন্নমুল শিশুরা যেন অন্য সবার থেকে আলাদা। শিক্ষা তাদের মৌলিক অধিকার হলেও জীবনের ঘানি টানার ভার তাদের সব সম্ভাবনাকে ধূলিস্যাৎ করে দেয়। তাই বলে কি শিশুর মুখের কোমল হাসি বিলীন হয়ে যাবে! না ফুটতেই ঝরে পড়বে শত সম্ভাবনাময় শিশুর জীবন! নাহ্ তা হবার নয়।

ছিন্নমূল পথশিশুদের আলোর পথ দেখাতে একে একে এগিয়ে আসছে দেশের তরুণ সমাজ। কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি ‘মজার স্কুলের’ অদম্য পথচলা। তাদের পথ ধরেই এবার ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এগিয়ে এসেছে জুম বাংলাদেশ স্কুল। রাজধানীর সেগুন বাগিচার একটি বস্তিতে কয়েকজন তরুণ গড়ে তুলেছে জুম বাংলাদেশ স্কুল নামে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের একটি স্কুল।

তাদের নেই কোনো অফিস কিংবা অবকাঠামো। রাস্তার এককোনে কিছুটা নীরব এলাকায় মাটিতে পাটি বিছিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালায় জুম স্কুলের উদ্যোক্তারা। শিশুদের শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণও তারাই সরবরাহ করে। যদিও তাদের আয়ের তেমন পথ নেই। উদ্যোক্তারা বলতে গেলে সবাই বেকার। তবু নিজ খরব বাঁচিয়ে শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে তারা বদ্ধ পরিকর। যেখানে সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের যুবকদের অনেকেই বিপথগামী সেখানে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র এই তরুণেরা তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

স্কুল থেকে ঝরে পড়া, মাদকাসক্ত এ সব ছিন্নমূল শিশুদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার উপকরণ দিয়েও সহায়তা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে বস্তির ছিন্নমূল পরিবারের শিশুদের সপ্তাহে তিন দিন বিকেলে খোলা আকাশের নীচে পাঠদান করছেন তারা। বর্তমানে স্কুলে শিশুর সংখ্যা ৩০ জন।

জুম বাংলাদেশ স্কুলের অন্যতম সমন্বয়ক এসটি শাহীন জানান, নিজস্ব ভাবনা থেকেই মূলত ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে কাজ করা। বস্তিতে বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে ঘুরে শিশুদের পাঠদান করাচ্ছি আমরা। পাঠদান শেষে প্রতিটি শিশুকে সামান্য খাবার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। যাতে করে লেখাপড়ার প্রতি তারা আকৃষ্ট হয়।

তিনি জানান, একঝাঁক সৃষ্টিশীল তরুণ স্কুলটি পরিচালনা করছেন। তারা হলেন, সাদ্দাম হোসেন সৌম্য, রুপকথা, তৌফিক, রাজিব, মাসুদ রানা, মামুন, সাকের, সিমা, রিয়াদ প্রমুখ। জুম বাংলাদেশ স্কুলের আরেক সমন্বয়ক মাহতাব শফি জানান, যারা পরিবার ও রাষ্ট্র থেকে শিক্ষার আলো বঞ্চিত, এমন কিছু পথশিশুদের নিয়ে আমাদের এ ক্ষুদ্র উদ্যোগ। তিনি বলেন, আপাতত জুম বাংলাদেশ স্কুল ক্ষুদ্র গণ্ডিতে আছে। সময় ও সুযোগ পেলে তা আরও বিস্তৃত হবে।

তিনি এ উদ্যোগকে বিস্তৃত করতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। জুম বাংলাদেশ স্কুলকে একটি ফাউন্ডেশনের রূপান্তরিত করতে চান। এজন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে উদ্যোক্তারা। যাতে ভবিষ্যতে সরকারি সহায়তাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম আরো বিস্তৃত করা যায়।

কেন এ স্কুলে পড়তে আস এমন প্রশ্নে স্কুলের এক ক্ষুদে শিক্ষার্থী অনিমা জানায়, অক্ষর চিনি না। তাই পড়তে আসি। আর স্যাররা খাবার দেয়। তার মা খোদেজা জানান, এমনিতে পড়ত না হে। এছাড়া নিজ বাড়ি কিশোরগঞ্জ থাকতে পড়াইতেও পারি নাই। এখানের মাস্টররা ভালো মানুষ। পড়াশুনাই শুধু করাই না। হেরারে নানাকিছু কিনেও দেয়।

Comments are closed.







প্রধান সম্পাদক : ফজলুল হক জোয়ারদার আলমগীর, সহ-সম্পাদক : দেলোয়ার হোসেন শরীফ।
বার্তা সম্পাদক - মাসুম পাঠান, প্রধান কার্যালয়: ১৩/এ মনেশ্বর রোড, হাজারিবাগ, ঢাকা- বাংলাদেশ।
জোনাল অফিস: বাংলাদেশ কম্পিউটার এন্ড টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, কটিয়াদী বাজার (অগ্রনী ব্যাংক নিচতলা), কিশোরগঞ্জ।
ফোন : ০১৭১১-১৮৯৭৬১, ০১৭১১-৩২৪৬৬০, ০১৭৩২-১৬৩১৫৭।
ই-মেইল: news@ghatanaprobaha.com, ওয়েবঃ- www.ghatanaprobaha.com
ডিজাইন: একুশে