ফখর উদ্দিন ইমরান, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ০৬ মে ২০২০।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে স্বর্ণলতা যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ঢাকার ইবনে সিনা মেডিকেল হাসপাতালের সাবেক স্টাফ নার্স শাহিনুর আক্তার ওরফে তানিয়াকে (২৪) পালাক্রমে ধর্ষণ ও পরে বাস থেকে ফেলে হত্যার এক বছর আজ (৬ মে)। কিন্তু তাকে হত্যার এক বছর কেটে গেলেও এখনো বিচার পায়নি পরিবার।
জানা যায়, ২০১৯ সালের এই দিনে(৬ মে) রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকার মহাখালী থেকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী হয়ে বাজিতপুরের পিরিজপুর রুটের বাসে বাড়ি যাচ্ছিলেন নার্স তানিয়া। কিন্তু বাড়ি আর ফেরা হয়নি তার। বাসেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। অথচ তার হত্যা মামলার চার্জশিটভূক্ত ৯ আসামির মধ্যে এখনো ২ জন অধরা। বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার বিচার না হওয়ায় হতাশ পরিবার। হতাশ ও শূন্যতায় ভরা মুখ নিয়ে ঘুরে ফিরছে আদালতের দ্বারে দ্বারে। আদালতের সুবিচারের প্রহর গুনছে নিহত নার্স তানিয়ার পরিবার।
নিহত নার্স শাহিনূর আক্তার তানিয়া ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। সেদিন তিনি ‘স্বর্ণলতা’ পরিবহনে করে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন। কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে মেয়ের অপেক্ষায় ছিলেন বৃদ্ধ বাবা মো. গিয়াসউদ্দিন। বাড়ির খুব কাছাকাছি চলে আসার পর কথাও হয়েছিল। কিন্তু বাড়িতে আর পৌঁছতে দেয়নি জঘন্য নরপশুরা।
কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের বিলপাড় গজারিয়া এলাকায় ম্লান হয়ে যায় সব। এ ঘটনার পরদিন তানিয়ার বাবা মো. গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে বাজিতপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩) এর ৯(৩) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এতে আসামি করা হয়- বাস চালক নূরুজ্জামান নূরু, হেলপার লালন মিয়া, আল-আমিন, রফিকুল ইসলাম রফিক, খোকন মিয়া, বকুল মিয়া উরফে ল্যাংরা বকুল, বাস মালিক মো. আল মামুন, বোরহান এবং স্বর্ণলতা পরিবহনের এমডি পারভেজ সরকার পাভেল।
এদের মধ্যে ৩ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়। গত বছরের ৮ আগস্ট ২০১৯ জবানবন্দির ভিত্তিতে মামলাটি তদন্ত সাপেক্ষে চার্জশিট দেয়ার পর বর্তমানে মামলাটি কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২নং আদালতে বিচারকার্যের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তানিয়ার ভাই কফিল উদ্দিন সুমন বলেন, পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়ার পরও অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) সারোয়ার জাহান স্বর্ণলতা বাসের চালক, হেলপারসহ ৯ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটভূক্ত দুই আসামিকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু এখন পর্যন্তও আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি।
বাজিতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খলিলুর রহমান পাটুয়ারি জানান, আসামি বোরহান এবং স্বর্ণলতা পরিবহনের এমডি পারভেজ সরকার পাভেল গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার বাসিন্দা। আমরা আমাদের যাবতীয় তথ্যাদি আদালতে দাখিল করেছি। পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে যাবতীয় সিদ্ধান্ত দেবে আদালত।
তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা খুব অসহায় ও গরীব। আমার মেয়ে চাকরি করে পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে ছিল। আমার মেয়ে সদা হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ছিল। কোনভাবেই ভূলে যেতে পারছি না তার ফেলে যাওয়া স্মৃতিগুলো। মেয়েকে তো আর ফিরে পাব না, তবে একটাই প্রত্যাশা আমার মৃত্যুর আগে যেন মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি।
তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ের হত্যাকারীরা মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার পায়তারা করছে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, আসামি পক্ষ রিভিউ করায় মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় স্থগিত রয়েছে। তবে বিচারাধীন মামলার ব্যাপারে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৬ মে রাতে ঢাকার মহাখালী থেকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের পিরিজপুর রুটে চলাচলকারী ‘স্বর্ণলতা’ নামের বাসে নার্স শাহীনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর বাস থেকে ফেলে দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
তিনি কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মো. গিয়াসউদ্দিনের মেয়ে। তানিয়া ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের কল্যাণপুর ক্যাম্পাসে সেবিকা পদে কর্মরত ছিলেন।
এদিকে তানিয়ার পরিবারের পাশাপাশি কটিয়াদী উপজেলাবাসীও এ হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করে আসামীদের সর্বোচ্চ বিচার দাবী করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
চলন্ত বাসে নার্স তানিয়াকে ধর্ষণ-হত্যার এক বছর, এখনো বিচার পায়নি পরিবার
প্রকাশ : May 06, 2020 | Comments Off on চলন্ত বাসে নার্স তানিয়াকে ধর্ষণ-হত্যার এক বছর, এখনো বিচার পায়নি পরিবার
