নজরুল ইসলাম খায়রুল, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদরের কড়িয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তদন্ত করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন অভিযোগের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের শিক্ষিকাদের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেন। এ ব্যাপারে মো. জালাল উদ্দিন জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে দেয়া এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়। তাদের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে অভিযোগটি বেনামি হওয়ায় অভিযোগকারীকে চিহ্ণিত বা তার কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি অভিযোগকারী শিক্ষিকার কোন পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি। যেহেতু অফিসিয়িাল তদন্ত হয়েছে তা বাহিরের কাউকে বলা ও প্রকাশ করাও যাবে না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে দেয়া অভিযোগে নাম প্রকাশ না করে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা বলেছেন, বেশ কিছুদিন আগে তার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় তাদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। একমাত্র পুত্রসন্তানকে আঁকড়ে ধরে সম্মানজনক জীবিকার মাধ্যম হিসেবে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কবিরুল ইসলাম তাদের বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে তার সঙ্গেও পরিচিত হন। এ সময় শিক্ষা কর্মকর্তা ওই শিক্ষিকার পারিবারিক খোঁজখবরও নেন। কুশলাদির এক পর্যায়ে তিনি স্বামীর সঙ্গে শিক্ষিকার বিবাহ-বিচ্ছেদের তথ্যটিও জানতে পারেন। সবকিছু জানার পর শিক্ষা কর্মকর্তা কবিরুল শিক্ষিকাকে বলেন, ‘আপনি তো খুব সুন্দর’ সহ নানা মন্তব্য করেন। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে এমন নানা মন্তব্যের পর সেখানেই থেমে থাকেননি কবিরুল। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা তার অভিযোগে বলেন, এরপর থেকে শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে মোবাইলে প্রায়ই নানা কুপ্রস্তাব দেন। কিন্তু আমি তার কোন কথাতেই রাজি হইনি। এখন তিনি হুমকি দিচ্ছেন, তার কুপ্রস্তাবে আমি যদি রাজি না হই, তাহলে চাকুরি ক্ষেত্রে তিনি আমাকে নানাভাবে হয়রানি করবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শোকজ-হয়রানির এমন হুমকি দিয়ে অনেক শিক্ষিকার সর্বনাশ করেছেন এই সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। ২০০১ সাল থেকে একাধারে দীর্ঘ ৬ বছরেরও বেশি সময় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় দায়িত্ব পালন কালে অনেক নারী শিক্ষিকা তার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুঁইয়েছেন। তার শোকজ-হয়রানির হুমকি ও বিয়ের প্রলোভন প্রতারণায় অনেক শিক্ষিকাই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। নারীলোভী এই শিক্ষা কর্মকর্তার ফাঁদ থেকে রেহাই পাননি অন্য উপজেলার শিক্ষিকারাও। সদর উপজেলায় বদলী ও বিয়ের প্রলোভনে ইটনার এক শিক্ষিকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন তিনি। সর্বস্ব লুট করে একপর্যায়ে অস্বীকার করেন তাকে। সামাজিক লজ্জা ও অপমান থেকে মুখ লুকাতে অগত্যা সোনার হরিণ নামক চাকুরিটাই ছাড়তে বাধ্য হন ওই শিক্ষিকা। পোশাক বদলের মতো করেই ফের একই প্রলোভনে মিঠামইনের এক শিক্ষিকার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান কবিরুল। কিছুদিন পর তাকেও ছুড়ে ফেলে জুটিয়ে নেন অন্য আরেকজনকে। এভাবে চলার একপর্যায়ে কিশোরগঞ্জ থেকে অন্য জেলায় বদলী করা হয় তাকে। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই তদ্বির ও দেন-দরবার করে ফের ২০১৩ সালে ফিরে আসেন কিশোরগঞ্জে। কিশোরগঞ্জে বদলী হয়ে এসেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন কবিরুল। আর এতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কর্মরত শিক্ষিকাদের মাঝে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষিকা বলেন, অন্যান্য পেশার থেকে শিক্ষকতা পেশা নারীর জন্য নিরাপদ ভেবেই শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু চরিত্রহীন শিক্ষা কর্মকর্তা কবিরুলের কারণে সেই নিরাপদ কর্মপরিবেশ এখন হুমকির মুখে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জননী হওয়ার পরও শিক্ষা কর্মকর্তার কুনজর থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। কৌশলে তাকে এড়িয়ে চলতে হচ্ছে। এটি একজন শিক্ষক হিসেবে আমার জন্য চরম অস্বস্তিকর একটি বিষয়। এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কবিরুল ইসলামের সাথেযোগাযোগ করা হলে তিনি আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আমার বিরুদ্ধে কল্পকাহিনী সাজিয়ে সম্পুর্ণ মিথ্যা ভূয়া ও বেনামী অভিযোগ দিচ্ছে। আমাদের কাছে শিক্ষকদেরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব শিক্ষকদের বিষয়ে তদন্ত ও তাদের স্বার্থে আঘাত পড়ায় আমার বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগ দায়ের করেছে।
কিশোরগঞ্জে শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ
প্রকাশ : Sep 19, 2016 | Comments Off on কিশোরগঞ্জে শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ
