নিজস্ব প্রতিবেদক
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় এক্সরে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাফি, প্যাথলজি ও অপারেশন থিয়েটার থাকলেও অ্যানেস্থেসিয়া ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ল্যাব. ও রেডিওলজিষ্ট না থাকায় বন্ধ রয়েছে সেবা কার্যক্রম। ফলে সরকারের কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কোন কাজে আসছে না। রোগীরা পাচ্ছে না সেবা।
জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানেথেসিয়া, সার্জারী, মেডিসিন, গাইনী এন্ড অব্স ও পেডিয়াট্রিক্স পাঁচ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূণ্য থাকায় চালু করা যাচ্ছে না অপারেশন থিয়েটার । স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনটি এক্সরে মেশিন রয়েছে এর মাঝে একটি অচল, একটি অকেজো ও একটি আধুনিক মানের নতুন মেশিন প্যাকেট বন্ধি করে রাখা হয়েছে। টেকনেশিয়ান রেডিওলজিষ্ট না থাকায় নতুন এক্সেরে মেশিনটি প্যাকেট থেকে খোলাই হয়নি। ফলে তালাবদ্ধ রুমে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে তিনটি এক্সরে মেশিন। ২০২০ সনের সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখে (০৭-০৯-২০২০) মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব.) গোলাম মস্তুফা অবসরে যাওয়ায় প্রায় ১০ মাস যাবৎ প্যাথলজিটি বন্ধ রয়েছে। ২টি এম্বুল্যান্স থাকলেও নেই কোন চালক। গুরুতর রোগীদের স্থানান্তরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। এভাবেই চলছে উপজেলার প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের চরকাউনিয়া গ্রামের ফাতেমা বেগম জানান, আমার স্বামী একজন খেটেখাওয়া দরিদ্র মানুষ। আমার সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে আসলে সিজারের ব্যবস্থা না থাকায় ডাক্তার অন্যত্র চিকিৎসা নিতে বলেন। ফলে প্রাইভেট হাসপাতালে আমার সন্তান প্রসবের জন্য প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরকারি ভাবে সিজারের ব্যবস্থা করতে পারলে আমি অর্থনৈতিক ভাবে উপকৃত হতাম।
বনগ্রাম ইউনিয়নের সাদেক মিয়া জানান, আমার স্ত্রী ইয়াসমিনের সন্তান প্রসবের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে এখানে সিজারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে তাদের ভুল চিকিৎসায় আমার সন্তান মারা যায়। সরকারি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারসহ সকল বন্ধ বিভাগ চালু করা জন্য আমি দাবি করছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে রোগ নির্ণয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পরীা-নিরীা করতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার না থাকায় তাদের জেলা সদর অথবা বাজিতপুরে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। প্রসূতি মা’দের প্রসব ও সিজারিয়ান সেবা নিতে যেতে হয় জেলা সদর কিশোরগঞ্জে, না হয় বেসরকারি কিনিকে চিকিৎসা নিতে বাড়তি অর্থসহ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. নাজমুস সালেহীন জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার, এক্সরে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাফি ও ল্যাবরেটরি থাকলেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় এ সব সেবা বন্ধ রয়েছে। ৫টি জুনিয়র কনসালটেন্ট, টেকনোলজিষ্টসহ বিভিন্ন সহায়ক জনশক্তির ৫৬ টি পদ শূণ্য আছে। ৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ শূণ্যপদ পূরণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপকে ৪ বার লিখিতভাবে অবহিত করেছি। আশা করি শিঘ্রই শূণ্য পদ পূরণ হবে এবং উপজেলাবাসি পূর্ণ সেবা পাবে।