দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে বিদেশি শ্রমিক নেওয়া বন্ধ থাকায় শ্রমিক সঙ্কটে পড়েছে মালয়েশিয়ার বেশিরভাগ শিল্প কারখানা। শ্রমিকের অভাবে কারখানা মালিকরা নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য হস্তান্তর করতে পারছে না। যা দেশটির মন্দা অর্থনীতিকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এমনই তথ্য উঠে এসেছে দেশটির জনপ্রিয় পত্রিকা দ্য স্টার-এ প্রকাশিত খবরে।
খবরে জানানো হয়, সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানাগুলোর ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছে ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকচারস (এফএমএম) নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানটির জরিপে বলা হয়, দেশটির প্রায় ৮৪ শতাংশ শিল্প কারাখানায় শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। আর এ নিয়ে কারখানার মালিকদের মধ্যেও রয়েছে তীব্র ক্ষোভ। কারণ তারা নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য হস্তান্তর করতে পারছে না।
দাতু সৈয়দ মোহাম্মদ ইজহার নামে এক টেক্সাইল কোম্পানির মালিক বলেন, ‘আমার কোম্পানির জন্য ১৩৫ জন শ্রমিক প্রয়োজন হলেও আমি সে পরিমাণ শ্রমিক পাচ্ছি না। বহু কষ্টে ২০ জনকে সংগ্রহ করেছি।’
শ্রমিকের অভাবে আমার শিল্প কারখানায় মেশিনগুলো অলস পড়ে আছে বলেও জানান এ ব্যবসায়ী।
এদিকে চায়না ও মালয়েশিয়ান ব্যবসায়ীদের সংগঠন চায়নিজ চেম্বারস অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অব মালয়েশিয়া (এসিসিসিআইএম) এর সাধারণ সম্পাদক দাতু লো কিয়ান চিয়ান বলেন, ‘শ্রমিকের অভাবে বিশেষ করে ফার্নিচার কারখানাসহ অন্যান্য কারাখানাগুলোর উৎপাদন কমে এসেছে। কোম্পানিগুলো নতুন করে অর্ডার নিতে ভয় পাচ্ছে।’
এ জন্য গত ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বৈধকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মি. চিয়ান।
অনেকটা একই সুরে কথা বলেছেন মালয় বিজনেসম্যান এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এ্যাসোসিয়েশন অব মালয়েশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট দাতু সোহাইমি শাহদান। অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সরকারকে শুধু শ্রমিক আনা বন্ধ রেখে চুপ থাকলেই হবে না বরং বিদেশি শ্রমিক নিয়ে তারা বিকল্প কি ভাবছেন তার সদুত্তর দিতে হবে।’
একই ইস্যুতে এতদিন নিশ্চুপ থাকলেও এখন কথা বলা শুরু করেছেন ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। সংগঠনটির সভাপতি বলেন, দীর্ঘ দু’মাস ধরে শ্রমিক আনা বন্ধ থাকায় বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মধ্যম সারির ব্যবসায়ীরা শ্রমিক সঙ্কটে ভুগছে। সরকার খুব দ্রুত এর সমাধান করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে শ্রমিকের অভাবে মালয়েশিয়ার প্রায় প্রতিটি রাজ্যের কারাখানা মালিকদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ কাজ করছে। এ অবস্থায় পেনাং এর মুক্ত ব্যবসায়িক অঞ্চলের সংগঠন ফ্রিপেনাকো মালয়েশিয়াতে তাদের বিনিয়োগ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। শ্রমিক বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে তারা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা ভাবছেন বলেও জানান সংগঠনটির নেতারা।
উল্লেখ্য, ফ্রিপেনাকো কোম্পানির অধীনে ৭০টি বৃহৎ কোম্পানি রয়েছে যার মধ্যে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর অংশীদারিত্ব আছে।
এদিকে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ান ম্যানুফেকচার্স মনে করে, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক বাজার হারাবে মালয়েশিয়া। যা দেশটির চলমান মন্দা অর্থনীতিকে আরও বেশি নাজুক অবস্থায় ফেলে দেবে।
উল্লেখ্য যে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া সরকার বিদেশ থেকে সব ধরনের কর্মী নেওয়া বন্ধের ঘোষণা দেয়। এর আগের দিন ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারীভাবে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিতে ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তি সই করে মালয়েশিয়া।