ঘটনাপ্রবাহ ডেস্কঃ
লিবিয়ায় নিহত ভৈরবের পাঁচ যুবক
লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ইতিমধ্যেই ২৪ বাংলাদেশির পরিচয় মিলেছে।
এদেরমধ্যে ৮ জনের বাড়িই কিশোরগঞ্জ জেলায়। এ আটজনের মধ্যে ৭ জনের বাড়ি এ জেলার ভৈরব উপজেলায় এবং এক জনের বাড়ি হোসেনপুর উপজেলায় বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে লিবিয়ার মিজদা শহরে এক বন্দি শালায় স্মরণ কালের বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
আর এ নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আন্তর্জাতিক সব মিডিয়ার ব্রেকিং ও শীর্ষ সংবাদ হয়ে ওঠে।
এ রক্তক্ষয়ী প্রাণহানির ঘটনায় হতাহতের মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলার ৯ জনের পরিচয় মিলেছে। তারা জেলার ভৈরব ও হোসেনপুর উপজেলার অধিবাসী। এসব লোকজনের বাড়িতে চলছে স্বজনদের শোকের মাতম ও আহাজারি ।
পাচারকারী চক্রের উপযুক্ত শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন নিহতদের স্বজনরা।
নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দালালচক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক।
জানা গেছে, পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর আশায় সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমান কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার রসুলপুর গ্রামের অধিবাসী সাদ্দাম হোসেন আকাশ।
কিন্তু; পাচারকারীদের গুলিতে প্রাণ গেলো তার। পরিবারের সবচেয়ে আদরের এ ছোট সন্তানের অকাল মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ বাবা-মা ও পরিবার-স্বজন।
পরিবার সূত্র জানায়, লিবিয়ায় একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করার সময় আকাশের পরিচয় হয় ভৈরবের শ্রীনগর গ্রামের দালাল তানজিমুলের সঙ্গে। ওই দালালের মাধ্যমে আকাশসহ ৩৮ বাংলাদেশি ইটালির পথে রওয়ান হন।
১৫ দিন আগে লিবিয়ার বেনগাজি থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ত্রিপলী নেয়া হচ্ছিল তাদের। পথে মিজদাহ শহরে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে সবাইকে জিম্মি করে রাখে মানবপাচারকারী চক্র।
জিম্মি অবস্থায় তাদেরকে অত্যাচার, নির্যাতন করার এক পর্যায়ে অভিবাসীদের হাতে এক শামীম রেজা নামে এক পাচারকারী মারা যায়। এ ঘটনার পর উন্মত্ত হয়ে ওঠে পাচারকারী চক্র।
বৃহস্পতিবার সকালে তাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলেই আকাশসহ ২৬ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়।
আকাশের ভাই বলেন, আমারে ভাই বার বার প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছে। তার কাছে ১০ হাজার ডলার মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। আমরা এতটাকা যোগাড় করতে পারিনি।
তারা আমার ভায়ের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও শেষ পর্যন্ত আমার ভাই বাঁচতে পারলো না।

এ ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজদের মধ্যে ২৪ জন এবং আহতদের মধ্যে ৯ জনের নাম-পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত ৬ জন ও আহত ৩ জনের বাড়িই কিশোরগঞ্জে।
নিখোঁজ ও মৃতদের তালিকায় থাকাদের ছয় জন হচ্ছেন, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের রাজন, শাকিল, সাকিব ও সোহাগ, রসুলপুরের আকাশ ও মো. আলী ও হোসেনপুরের আবদুর রহিম।
এ ছাড়া আহত ৩ জনও কিশোরগঞ্জের। এরা হলেন, পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ভৈরবের শম্ভপুর গ্রামের মো. জানু মিয়া, দু’হাতে মারাত্মকভাবে জখমপ্রাপ্ত জগন্নাথপুর গ্রামের মো. সজল মিয়া, আঘাতপ্রাপ্ত সখিপুরের মৌটুপী গ্রামের সোহাগ আহমেদ (২০)।
বর্তমানে তারা ত্রিপোলি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অন্যান্য বাংলাদেশীদের মধ্যে মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার টেকের হাট গ্রামের আসাদুল, আয়নাল, মনির, সজীব, শাহীন, জুয়েল, মানিক, জাকির, শামীম, সৈয়দ, ফিরোজ, ঢাকার আরফান, যশোরের রাকিবুল, গোপালগঞ্জের সুজন, কামরুল, কিশোগঞ্জের হোসেনপুরের আবদুর রহিম রয়েছেন।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, এখন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে কোনো বার্তা না পাওয়া গেলেও তিনি বিষয়টি জানতে পেরে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ছাড়াও এসব তথ্যাদি সংগ্রহ পুলিশ সুপারের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য সকল ধরনের সহযোগিতা ও ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরী।