logo

মনোহরদীতে ক্ষুধার্ত বানরের দল লোকালয়ে


হারুন-অর-রশিদ, মনোহরদী থেকে
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর ইউপির কয়েকটি গ্রামে বসবাসরত সহস্রাধিক বানরের মাঝে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বনের ভেতর খাবার না পেয়ে লোকালয়ে এসে ভিড় করছে বানরের দল।
করোনার এ সংকটময় মুহূর্তে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে ওই এলাকার বানরের জন্য কোনো প্রকার খাবারের ব্যবস্থা হয়নি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বানরগুলো খাবারের অপেক্ষায় থাকে, স্থানীয়দের ও বিভিন্ন এলাকা থেকে দেখতে আসা লোকজনের সামান্য কিছু খাবারে কোনো রকমে বেঁচে আছে তারা।
অনেক আগে থেকেই মনোহরদীর সর্ব উত্তরে রামপুর জায়গাটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা। সেখানে রয়েছে অনেক পুরাতন একটি বাজার, একটি সোনালী ব্যাংক ও পুলিশ ফাঁড়ি। কথিত আছে, আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী এ বাজারে নিয়মিত অবাধ বিচরণ ছিল ব্যবসায়ীদের। প্রায় ২০০ বছর আগে এ বাজারে মানুষের পাশাপাশি আস্তানা গড়ে তোলে বন্যপ্রাণী বানর। দীর্ঘদিন ধরে বাজারের দোকান থেকে তাদের খাবারের সংস্থান হয়ে আসছিল। সম্প্রতি করোনাভাইরাস রোধে লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে এখানকার সহস্রাধিক বানর।
যতই দিন যাচ্ছে খাবারের অভাবে অভুক্ত বানরের কান্না যেন ততই বাড়ছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে শূন্য বাজারে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখলেই খাবারের আশায় ক্ষুধার্ত বানরগুলো নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকে।

রামপুর গ্রামের শ্রী গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাশ জানান, বাজার এলাকায় বানর দলবেঁধে চলাচল করে। কখনো নদীর ধারে, আবার কখনো দোকানের টিনের চালে তাদের দেখা মেলে। বন্যপ্রাণী হলেও বন ছাড়াও সামাজিকভাবে তারা বিভিন্ন মানুষের বাসা-বাড়ি বা দোকানের পরিত্যক্ত স্থান বা গাছে আস্তানা গড়ে তুলেছে। বুদ্ধিমান হিসেবে বাখুব পরিচিত। তারা নিরামিষভোজী হলেও বাসস্থান বা খাবারে বেশ বৈচিত্র আছে। মাঝে মধ্যে সরকারি লোকজন এসে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করলেও সব সময় করা হয় না।

সরেজমিনে দেখা যায়, বানরের দল খাবারের জন্য লোকালয়ে অবস্থান করছে। রামপুর,পূর্বরামপুর, লেংটি আহম্মদপুর, চরসাগরদি ও জীবকায়াসহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রামের জঙ্গলে তাদের বসবাস। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাদ্যের সন্ধানে তারা এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে দৌড়াতে থাকে। গাছের মুকুল, সবজি, ফলমূল, লতাপাতাসহ নানা রকমের খাবার খেয়ে থাকে বানর। প্রায়ই এসব বানর এলাকার কৃষকদের কলা বাগান, ধান ক্ষেত, পেঁপে বাগান, মরিচ ক্ষেত ও পানের বরজসহ বিভিন্ন শস্যাদির ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে।
বিভিন্ন দলে দলবদ্ধ হয়ে তারা এলাকায় বিচরণ করে। দলগত ঝগড়াও বেধে যায় তাদের মাঝে। ঝগড়া হলে কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। খাবারের সংকট দেখা দিলে লোকালয়ে তাদের অত্যাচার বেড়ে যায়। বাজারের দোকানঘর ও বাসা বাড়ির রান্না ঘর থেকে খাবার নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ছাড়া খাবারের জন্য পথচারীদের পথরোধ করে।
এলাকার সুব্রত কুমার দাঁশ জানান, পরিবেশের ভারসাম্য হারানোর কারণে প্রকৃতি থেকে খাবার গ্রহণের কোনো ধরনের সুযোগ বানরের নেই। এখন তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাবারের ব্যবস্থা না করা হলে তারা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে। অপরদিকে বিপন্ন হয়ে যাবে এলাকার বানরগুলো।
রামপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সংরক্ষিতভাবে এ এলাকায় বানরের জন্য একটি অভয়ারণ্য গড়ে উঠলে এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থা করলে এলাকাটি একটি পর্যটন এলাকায় রূপ নেবে।
মনোহরদীর ইউএনও শাফিয়া আক্তার শিমু বলেন, ডিসি স্যারের নির্দেশে মাঝে মধ্যে বানরদের খাবার দেয়া হয়। এছাড়া এলাকার বিত্তবানদের তাদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছে। বানরের একটি অভয়ারণ্য করার জন্যও কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

Comments are closed.







প্রধান সম্পাদক : ফজলুল হক জোয়ারদার আলমগীর, সহ-সম্পাদক : দেলোয়ার হোসেন শরীফ।
বার্তা সম্পাদক - মাসুম পাঠান, প্রধান কার্যালয়: ১৩/এ মনেশ্বর রোড, হাজারিবাগ, ঢাকা- বাংলাদেশ।
জোনাল অফিস: বাংলাদেশ কম্পিউটার এন্ড টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, কটিয়াদী বাজার (অগ্রনী ব্যাংক নিচতলা), কিশোরগঞ্জ।
ফোন : ০১৭১১-১৮৯৭৬১, ০১৭১১-৩২৪৬৬০, ০১৭৩২-১৬৩১৫৭।
ই-মেইল: news@ghatanaprobaha.com, ওয়েবঃ- www.ghatanaprobaha.com
ডিজাইন: একুশে