বিরামপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা : মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে হাতে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সহপাঠী মৃত্যুর বিচারের দাবি জানিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয় কাটলা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বৃষ্টিতে ভিজেই সহপাঠীর মৃত্যুর জন্য ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শাস্তি দাবি করেন। নিহত শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য দায়ী শিক্ষকদের বিচার না হলে তারা ক্লাস বর্জন, বিক্ষোভ মিছিলসহ আরো কঠোর কর্মসূচি নেবেন বলে দাবি করেন। মানববন্ধনে অংশ নেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং সাধারণ জনতা।
গত ৭ আগস্ট দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় কাটলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবহেলায় দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী আব্দুল আজিম মণ্ডল এর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় দোষী শিক্ষকদের শাস্তির দাবিতে শনিবার (১০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় ওই বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকসহ স্থানীয় সাধারণ জনতা। মানববন্ধনে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ জনতা অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী মো. মাহফুজুর রহমান নামের এক অভিভাবক বলেন, শিক্ষকরা হচ্ছে মানুষ গড়ার কারখানা। কিন্তু এই বিদ্যালয়টিকে শিক্ষকগণ মানুষ মারার কারখানায় পরিণত করেছেন। তাই তিনি ওই বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য একটি সুষ্ঠু তদন্ত কমিটি করে দোষী শিক্ষকদের বিচার দাবি করেন।
স্থানীয় ছাত্রনেতা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘এই বিদ্যালয়টি একসময় দিনাজপুর জেলার মধ্যে সেরা বিদ্যাপীঠ ছিল। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে এসে লেখাপড়া করত। কিন্তু বিগত ১০ বছর ধরে এ বিদ্যালয়ে অবৈধভাবে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বাইরের লোকদের নিয়োগ দেওয়ায় বিদ্যালয়ের সুনাম ও ঐতিহ্য নষ্ট হয়েছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষকদের চরম অবহেলায় আমরা একজন মেধাবী ছাত্রকে হারালাম।
নিতহ ছাত্রের সহপাঠী মহরম বাদশা বক্তব্যে বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবহেলায় আমরা আমাদের একজন মেধাবী বন্ধুকে হারিয়েছি। এ ঘটনায় দোষী শিক্ষকদের বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
মানববন্ধনে অংশ নেন স্থানীয় কাটলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইউনুস আলী। তিনি বলেন, এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেদের অবহেলায় আমরা আমাদের এক মেধাবী শিক্ষার্থীকে হারালাম। এর ন্যায্য বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে। তিনি আগামী ২০ আগস্ট বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবারো ক্লাস বর্জন, বিক্ষোভ মিছিল ও শোকসভার কর্মসূচি দেন।
মানববন্ধন শেষে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার মানববন্ধন স্থলে এসে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, গত ৭ আগস্ট সকালে কাটলা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল আজিম মন্ডল ক্লাস শুরুর দিকে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তৎক্ষণাৎ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাকে মোটরসাইকেলে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার জন্য ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিকট সহযোগিতা চাইলে কোনো শিক্ষকই সহযোগিতা করতে রাজি হননি। পরে, শিক্ষার্থীরা তাকে ভ্যানযোগে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আব্দুল আজিম মন্ডলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ওই বিদ্যালয়ের বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা দুপুরে বিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষকের ব্যবহৃত ৬টি মোটরসাইকেল আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।