logo

তাড়াইলের হরিগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্রের অনুকরণীয় উদ্যোগ

এনামুল হক  কিশোরগঞ্জ থেকে:
ছোট দুই সন্তানননকে স্কুলে দিতে ভুল করেননি পারভিন আক্তার। ঘরে অন্ধ স্বামী। আছে আরো চারটি সন্তাননন। অনিশ্চিত জীবন-জীবিকার চোখরাঙানি উপেক্ষা করেও তিনি সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। কেউ স্কুলে, কেউ মাদ্রাসায়, কেউবা কলেজে আছে। তিনি চান, তার সন্তানরা একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু তার সন্তানদের প্রায়ই না খেয়ে স্কুলে যেতে হয়। টিফিনের সময় বাড়িতে গিয়েও খাবার পায়না। এভাবে খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে বায়োজিদ(৯) ও মামুন (৬)। এরা কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের হরিগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। শুধু তারা নয়, চরম অভাবী মুসলিমার(৩০) দুটি ছেলে এ স্কুলে পড়াশোনা করে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যে ধরনের খাবার-দাবার শিশুদের দেওয়া উচিত, তিনি তা দিতে পারেন না। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু একটা করা হলে, এই শিশুদের পুষ্টির ঘটাতি পূরণ হতো।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, খিদে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ায় অনেক শিশু পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারেনা। দুপুর হলেই বাড়ি চলে যায় কেউ কেউ। বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এ বিদ্যালয়ের ছাত্র এবি ফ্যাশনের মালিক সানাউল হক বাবুল। তার বাড়ি হরিগাতি গ্রামে। ব্যবসাপাতি ঢাকায়।  তাঁকে এ বিদ্যালয়ের জন্য কিছু একটা করার প্রস্তাব দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। রাজি হয়ে যান তিনিও।

ব্যবসায়ী সানাউল হক বাবুল বলেন,  বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ১৮০জন শিক্ষার্থী আছে।পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিদিন দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে দুদিন একাজটি আমি করব। শুক্রবার বাদে সপ্তাহের ছয় দিনই শিশুদের জন্য দুপুরের খাবার ব্যবস্থা আমি করতে পারতাম। কিন্তু অভিভাবকদের আরো সচেতন করতে আমি সব শিক্ষার্থীকে একটি করে ‘টিফিনবক্স’ উপহার দিয়েছি। বাকি চারদিন তারা বাড়ি থেকে স্কুলে খাবার নিয়ে যাবে। আর দু’দিন আমি শিশুদের আপ্যায়ন করব। উদ্যোগটিতে যুক্ত হতে পেরে তার ভালো লাগছে।

জানা গেছে, ওই ব্যবসায়ী, যদি এ বিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় শনিবার (১৩আগস্ট) থেকে বিদ্যালয়টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় মিডডে মিল কর্মসূচি। এ উপলক্ষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিল বিদ্যালয়ের সব ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। আয়োজনটি দেখতে ছুটে যান, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাসসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের একটি ইতিহাস থাকে। খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে এসব বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ হয়তো সমাজ বা রাষ্ট্রের উচ্চাসনে আছেন। কেউ হয়তো বড় ব্যবসায়ী। ওই ব্যক্তিটিকে ঠিকমতো অনুপ্রাণিত করতে পারলে তিনি নিশ্চই তাঁর শৈশবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। সেই প্রচেষ্টার ফলেই কিন্তু এ বিদ্যালয়ে মিডডে মিল চালু হয়েছে। এ উদ্যোগটি ছড়িয়ে দিতে হবে।
জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা এভাবে সমাজের বিশিষ্ট লোকজনকে তাঁর এলাকা বা তার নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে যুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছি। এ উদ্যোগে সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে ভালো।
তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা আক্তার বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সানাউল হক বাবুলকে ধন্যবাদপত্র দেওয়া হবে। তাঁর উদ্যোগকে স্মরণীয় করে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাতে অন্যরা এ ব্যাপার আগ্রহী হয়ে উঠেন।
পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র খাইয়ুম, তৃতীয় শ্রেণীর আতিকও চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী তমা জানায়, টিফিনবক্স ও খাবার পেয়ে তারা খুব খুশি হয়েছে। প্রতিদিন ওই টিফিনবক্সে বাড়িতে যা রান্না হয় তা নিয়ে এখন থেকে বিদ্যালয়ে আসবে তারা। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র সাগর জানায়, তার একজন গরিব বন্ধু আছে, তার জন্যও সে খাবার নিয়ে আসবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এলাকার কয়েকজন অভিভাবক জানায়, খিদের কারণে অনেক শিক্ষার্থী দুপুরই বাড়িতে চলে যায়। তারা আর ফিরে আসে না। সপ্তাহে দুদিন হলেও যে উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে, এতেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বাড়বে। বাকি চারদিন অভিভাবকরাও নিশ্চয়ই খাবার দিয়ে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাবে।তারা মনে করেন এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। বিদ্যায়ের সভাপতি আপ্তাব উদ্দিন ও  প্রধান শিক্ষক শাহ আলম বিদ্যালয়টিতে মিডডে মিল কর্মসূচি চালু হাওয়াতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আরো মনোযোগী হবে।

Comments are closed.







প্রধান সম্পাদক : ফজলুল হক জোয়ারদার আলমগীর, সহ-সম্পাদক : দেলোয়ার হোসেন শরীফ।
বার্তা সম্পাদক - মাসুম পাঠান, প্রধান কার্যালয়: ১৩/এ মনেশ্বর রোড, হাজারিবাগ, ঢাকা- বাংলাদেশ।
জোনাল অফিস: বাংলাদেশ কম্পিউটার এন্ড টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, কটিয়াদী বাজার (অগ্রনী ব্যাংক নিচতলা), কিশোরগঞ্জ।
ফোন : ০১৭১১-১৮৯৭৬১, ০১৭১১-৩২৪৬৬০, ০১৭৩২-১৬৩১৫৭।
ই-মেইল: news@ghatanaprobaha.com, ওয়েবঃ- www.ghatanaprobaha.com
ডিজাইন: একুশে