ঘটনাপ্রবাহ রিপোর্ট
কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী মডেল থানার চাঞ্চল্যকর নূরুন্নাহার হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন এবং ঘাতককে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে আশ্রয়দাতা তিন সন্তানের জনক কথিত মামা রুবেল আহম্মেদ (৪৪) বিয়ের করার প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন নূরুন্নাহারকে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তাসলিম আক্তারের খাস কমরায় দ:বিধির ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দীতে রুবেল এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: জামির হোসেন জিয়া এবং পিবিআই আজ শুক্রবার বিকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২ ডিসেম্বর গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানার দেওড়া এলাকা থেকে জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নয়াকান্দি গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে রুবেল আহম্মেদকে মামলার হত্যার সন্ধিগ্ধ আসামী হিসেবে আটক করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে সন্ধ্যার দিকে তিনি ভিকটিম নুরুন্নাহারকে নিজে একা হত্যা করেছেন মর্মে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রদান করেছেম।
মামলা এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দী থেকে আরও জানা যায় , আসামী রুবেল বিবাহিত এবং তার দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ে সন্তান আছে।
ঘটনার আনুমানিক বছর খানেক আগে আসামী রুবেল তার চাচী শাশুরী ময়না বেগমের বাড়িতে যায়। সেখানে তার চাচী শাশুরীর মাধ্যমে স্বামী পরিত্যক্তা ১ সন্তানের জননী ভিকটিম নুরুন্নাহারের (২৫) সঙ্গে পরিচয় হয়।
ভিকটিম নুরুন্নাহার আসামী রুবেলকে তখন থেকে মামা এবং আসামী রুবেল ভিকটিমকে খালাম্মা বলে সম্বোধন করতেন । পরিচয় পর্বে দু’জনের কুশল ও মোবাইল নাম্বার বিনিময় হয়।
পরবর্তীতে আসামি রুবেল এবং ভিকটিম নুরুন্নাহারের মধ্যে প্রায়ই কথা হতো। কিছুদিন পর পর ভিকটিম নুরুন্নাহার রুবেলের মোবাইলে ফোন দিয়ে বলে সে ঢাকায় গামেন্টসে কাজ করতেন, করোনার কারণে কোন কাজ কর্ম নাই। তাই এমন পরিস্থিতিতে তার কাছে সেলাইয়ের কাজ শিখতে চান তিনি।
এ সুযোগে ভিকটিম নুরুন্নাহারকে রুবেল সেলাই কাজ শেখানোর কথা বলে করিমগঞ্জ পৌরসভার বেপারী পাড়া (কুলু পাড়া)’র রেনু মিয়ার বাসায় ১৭০০/-(এক হাজার সাতশত) টাকায় একটি ভাড়া বাসা ঠিক করে দেন।
এ ছাড়া সেলাই কাজ করার জন্য রুবেলের বাসা থেকে একটি বাটারফ্লাই সেলাই মেশিন এনে দেন। প্রায় সময় রুবেল ভিকটিম নুরুন্নাহারের বাসায় আসা যাওয়া করতো।
রুবেল নুরুন্নাহারকে প্রায়ই কাপড় চোপড় কিনে দিতেন এবং বাজার সদাইও করে দিতেন । এমনকি রুবেল প্রায় সময়ই নুরুন্নাহারের বাসায় খাওয়া দাওয়া করতেন।
একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তারা দু’জন পরকিয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
আর এই সম্পর্ককে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রুবেল ভিকটিম নুরুন্নাহারকে কাপড়ের দোকান দিয়ে দেবে বলে তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে কৌশলে প্রায় ৩,০০০০০/- (তিন লাখ) টাকা হাতিয়ে নেন। এক পর্যায়ে রুবেলকে ভিকটিম নুরুন্নাহার তার পাওনা টাকা ফেরৎ দিতে এবং বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করিলে রুবেল নিজেকে অবস্থা থেকে রক্ষার জন্য এ হত্যার ফন্দি আঁটেন।
ঘটনার দিন চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর অত্যন্ত কৌশলে বিয়ে করার প্রলোভনের ফাঁদে ফেলেন ভিকটিম নুরুন্নাহারকে।
নূরুন্নাহার তার পূর্বের একমাত্র ছেলে দুহাই(২.৫)কে তার ছোট বোন শামছুন্নাহারের কাছে রেখে বাড়ি থেকে বের হন। একই কায়দায় তারা দু’জন কিশোরগঞ্জ থেকে আলাদা আলাদা ভাবে কটিয়াদি বাস স্ট্যান্ড গিয়ে একত্রিত হন।
সেখানে একত্রিত হওয়ার পরপরই তারা দু’জন মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। তারপর দু’জন সারাদিন কটিয়াদি এবং বাজিতপুর থানা এলাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান।
রাত অনুমান ১০/১১ টার দিকে রুবেল ভিকটিম নুরুন্নাহারকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা জর্জ ইনস্টিটিউশনের কাছে নির্জন স্থানে নিয়া যান। সেখানে এক পর্যায়ে রুবেল তার মুখ চেপে ধরেন। এ সময় ভিকটিমের সঙ্গে থাকা বিয়ের নতুন শাড়ী দিয়ে ভিকটিম নুরুন্নাহারের গলায় প্যাচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। আর তার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পাশের ধান ক্ষেতে ফেলে রেখে পালিয়ে যান রুবেল।
পরের দিন কটিয়াদী মডেল থানা পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয়ের নারী হিসেবে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
লোকমুখে খবর পেয়ে আত্মীয় স্বজন গিয়ে নূরুন্নাহারকে সনাক্ত করেন।
১৬ নভেম্বর নূরুন্নাহারের ভাই মো. জয়নাল আবেদীন বাদি হয়ে কটিয়াদী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। মামলায় নূরুন্নাহারের সর্বশেষ কর্মস্থল উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তীতে ১৮ নভেম্বর এ মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হলে মামলাটির তদন্তভার ন্যস্ত পিবিআই এর পরিদর্শক (নিঃ) মো. জামির হোসেন জিয়া ওপর।
নূরুন্নাহার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের গাগলাইল গ্রামের মৃত ইমাম হোসেনের মেয়ে।
তিনি ২০১৫ সালে জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী গ্রামের মৃত আবদুল আজিজের ছেলে মো. বাছির উদ্দিনের (৩৪) সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তার একটি ছোট্ট শিশু সন্তান রয়েছে। কিন্তু; দীর্ঘদিন যাবৎ স্বামীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না তার।
কটিয়াদীর চাঞ্চল্যকর নূরুন্নাহার হত্যার রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই আশ্রয়দাতা কথিত মামা রুবেলই হত্যাকারী, আদালতে স্বীকারোক্তি
প্রকাশ : Dec 04, 2020 | Comments Off on কটিয়াদীর চাঞ্চল্যকর নূরুন্নাহার হত্যার রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই আশ্রয়দাতা কথিত মামা রুবেলই হত্যাকারী, আদালতে স্বীকারোক্তি
