রফিকুল হায়দার টিটুঃ
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে বোরো ধান চিটা হয়ে যাওয়ায় চাষীরা পড়েছে বিপাকে। হাওর ঘেষা এ এলাকার কৃষক বিশেষ করে প্রান্তিক চাষীদের বোরো ধানের উপরই তাদের সুখ শান্তি নির্ভর করে। বছরের সিংহভাগ সময়ের খাদ্যের প্রধান উৎস্য এ বোরো ধান। স্বাবলম্বি কৃষক বছরের খাদ্য সংরক্ষণ ও উদ্বৃত্ত ধান বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করেন। কিন্তু এবার বেশ কিছু প্রান্তিকচাষী তাদের জমিতে নতুন জাতের ব্রি-৮১ ও ব্রি-২৮ আবাদ করে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। ব্রি-২৮ ও ৮১ জাতের বেশীর ভাগ জমির ধানই চিটা হয়ে পড়েছে। আগামী বছর কিভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এলাকার কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ১টি পৌর ও ৯টি ইউনিয়নের ১২ হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে ৫৪ হাজার ৫৬৭ মে.টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ব্রি-১৪, ২৮, ২৯, ৫৮, ৬৩, ৬৭, ৭৪, ৮১, ৮৪, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের কিছু ধান রয়েছে। এ সকল উন্নত জাতের ধানের মধ্যে ব্রি ২৮,২৯ ও হাইব্রিডের আবাদ বেশী হয়েছে। ব্রি ২৮ জাতের ধান তুলনামুলক সময় একটু কম লাগে এবং এর ফলনও ভাল হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাপাওয়ার আশায় কৃষকগণ ২৮ জাতের ধানকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। গত দুই তিন মৌসুম যাবত ব্রি ৮১ জাতের নতুন ধান আবাদের জন্য চাষীদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ বছর ২০টি প্রদর্শনী প্লটসহ ১শত২০ হেক্টর জমিতে এ নতুন জাতের ব্রি ৮১ ধান আবাদ করা হয়েছে। বৈশাখের শুরু থেকেই আগাম জাতের ৮০-৯০ভাগ পাকাধান কাটতে শুরু করেছে কৃষক। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে।
বিলম্বে রোপিত ধানে মাত্র ছরা বের হচ্ছে। আগাম রোপিত যে সকল ধান এখন কাটার সময় এর মধ্যে ব্রি ২৮ ও নতুন ৮১ জাতের ধান বিশেষ করে ৮১ জাতের ধান বেশীর ভাগই চিটা হয়ে গেছে। ফলে প্রান্তিক চাষীরা তাদের জমিতে ৮১ জাতের ধান আবাদ করে পড়েছেন মহা বিপাকে। তারা বলছেন ৮০-৯০ভাগই চিটা হয়ে পড়েছে। ধান কেটে ঘরে তুলে আনতে গেলে শ্রমিকের মজুরীই দেয়া সম্ভব হবে না। যে টাকা বিনিয়োগ করে বোরো আবাদ করা হয়েছে পুরো টাকাই গচ্ছা দিতে হচ্ছে। আগামী বছর খাদ্য সংকট মিটিয়ে কিভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক।
উপজেলার চান্দপুর ইউনিয়নের টান ভাংনাদি গ্রামের কৃষক খোকন মিয়া জানান, আড়াই বিঘা জমিতে ৮১ জাতের ধান আবাদ করে তার মোট খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। তার পুরো জমির ধানই চিটা হয়ে গেছে। একই গ্রামের কাসেম, বাচ্চু মিয়া, আসাদ মিয়া, হাবিবুর রহমান, মুকুল মিয়াসহ অনেক প্রান্তিক কৃষক জানান তাদের জমির ধানও চিটা হয়ে গেছে। পৌর এলাকার কামারকোনা গ্রামের কৃষক রুস্তম আলী জানান, তার দুই বিঘা জমিতে ৮১ জাতের ধান আবাদ করেন। এক বিঘা জমির ধান চিটা হয়ে গেছে। অন্য জমির ধান মাত্র ছরা বের হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কি হয় বুঝতে পারছেন না। কৃষি অফিসের কেউ খোঁজ খবর নেয় কি না জানতে চাইলে বলেন, না কোন অফিস থেকে আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি বা কোন রকম পরামর্শও দেয়নি।
লোহাজুরী ইউনিয়নের দশপাখি গ্রামের কৃষক মস্তোফা মিয়া জানান, তার দুই বিঘা জমিতে ৮১ জাতের বোরো ধান চিটা হয়ে গেছে। মুমুরদিয়া ইউনিয়নের মুমুরদিয়া গ্রামের সাজু মিয়া জানান, তার ৪ বিঘা জমির ২৮ জাতের ধান অর্ধেকের বেশী চিটা হয়ে গেছে। একই গ্রামের মাইনুদ্দিনের জমির ধানও চিটা হয়ে গেছে। আচমিতা ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম মেম্বার জানান, তার প্রায় ৬ বিঘা জমিতে ২৮ জাতের ধান আবাদ করা হয়। এর বেশীর ভাগই চিটা হয়ে গেছে। একই ইউনিয়নের অস্টঘড়িয়া গ্রামের আনিছ মিয়া, নুরুল ইসলাম জানান তাদের জমির ধানও চিটা হয়ে গেছে।
করগাঁও ইউনিয়নের মোবারক জানান, হাওরের বহু কৃষকের ২৮ জাতের ৪০-৫০ ভাগ ধান চিটা হয়ে পড়েছে। জালালপুর ইউনিয়নের কালাম, আ: হান্নান, বাদল, ফরিদ মিয়া ও শামসুল আলম সুরুজ মিয়ার জমির বেশীর ভাগ ধান চিটা হয়ে গেছে বলে জানান। ধূলদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম পুরুড়া গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান জানান, ৮১ জাতের ধান ভাল হয়েছে তবে ২৮ জাতের ধানে ৩০-৪০ভাগ চিটা হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুকশেদুল হক বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়মিত তাদের ব্লকের কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসলেও অনেক কৃষক তা মেনে চলেন না। তারা জমিতে কোন প্রকার স্প্রে করেনি। প্রয়োজন অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ এবং হালকা মাটির কারণেও এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত জমিতে এখনও স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। আবাদি সামান্য কিছু জমির ধান চিটা হয়েছে সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, উৎপাদিত ধানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এবং খাদ্য ঘাটতির কোন সম্ভাবনা নেই।
কটিয়াদীতে বোরো ধানে চিটা বিপাকে চাষিরা
প্রকাশ : Apr 17, 2020 | Comments Off on কটিয়াদীতে বোরো ধানে চিটা বিপাকে চাষিরা
