মো. রফিকুল হায়দার টিটু, নিজস্ব প্রতিবেদক
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী ডাকঘর থেকে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা উত্তোলনে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকগণ। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে আসা নারী পুরুষ মুনাফা উত্তোলনের জন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থেকে টাকা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। কিছু লোক টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেলেও তিন চারদিন যাবত ঘুরে টাকা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভূক্তভোগীরা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, কটিয়াদী ডাকঘর থেকে কটিয়াদী ও এর পাশর্^বর্তী উপজেলার সাধারণ মানুষ পরিবার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে মেয়াদান্তে মুনাফার টাকা উত্তোলনের জন্য ডাকঘরে ভীড় করেন। করোনা ভাইরাসের কারণে কলাপসিবল গেইট লাগানো থাকে ফলে প্রচন্ড রোদে খোলা আকাশের নিচে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় তাদের। কিন্তু ১২টা বাজার সাথে সাথে ভিতর থেকে জানিয়ে দেয়া হয় আজ আর টাকা দেয়া হবে না। হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় গ্রাহকদের। তিন চার দিন যাবত প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা উত্তোলন করতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক বৃদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা নারী পুরুষ।
টাকা নিতে আসা ফজলু মিয়া বলেন, এক সপ্তাহ যাবত ঘুরছি। সকালে এসে লাইনে দাঁড়াই। কিন্তু আমার সঞ্চয় বই-ই জামা দিতে পারছি না। আজ সকাল সাড়ে আটকায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখন সাড়ে দশটা বাজে, আমার সামনে যে কজন ছিল একজনও বই জমা দিতে পারেনি। দুপুর ১২টা বাজার সাথে সাথে বন্ধ করে দিয়ে বলবে কাল আসেন। টাকা উত্তোলন করতে আসা চরনোয়াকান্দি গ্রামের মানিক মিয়া বলেন, আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি আমাদের বই জমা দিতে পারি না। কিন্তু উনার কিছু এজেন্ট আছে যারা বইয়ের ভিতর এক-দেড়শ টাকা দিয়ে ভিতরে পাঠালে চুপি চুপি তাদের টাকা দিয়ে দেয়। পাশর্^বর্তী পাকুন্দিয়া উপজেলার পারিয়াপারা গ্রামের জোসনা বলেন, চারদিন যাবত ঘুরছি। প্রতিদিন আসা যাওয়া ৪শ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু টাকা উত্তোলন করতে পারছি না। আজ সকাল থেকে লাইনে দাঁড়ানো সাড়ে দশটা বাজে। এখনো বই জমা দিতে পারি নি। মুক্তিযোদ্ধা আ.মান্নান ভূইয়া বলেন, দুইদিন যাবত ঘুরে যাচ্ছি। রোজা রেখে প্রচন্ড রোদে দাঁড়িয়ে আছি। আর কত দিন ঘুরতে হবে? কটিয়াদী পূর্বপাড়া মহল্লার হোসনা জানান, তিন বছর মেয়াদী আমানতের মেয়াদ পুর্তি হয়েছে গত ডিসেম্বর মাসে। টাকা উত্তোলন করতে আসলে নানা অজুহাত দেখায়। আমাকে কিশোরগঞ্জ জেলা পোস্টঅফিসেও যোগাযোগ করতে বলেছে। গত সপ্তাহে কিশোরগঞ্জ পোষ্ট অফিসে গিয়ে দেখা করি। তারা বলে আপনি কটিয়াদী পোস্ট অফিসে যান টাকা দিয়ে দিবে। কিন্তু অদ্যাবধি টাকা তুলতে পারছি না।
দুর্ভোগের বিষয়ে উপজেলা পোষ্ট মাস্টার মো.ইসমাইল ফকির বলেন, আমার জনবল কম। মাত্র একজন দিয়ে সঞ্চয় পত্রের কাজ পরিচালনা করতে হয়। চাপ কমানোর জন্য আজ তাড়াইল উপজেলা পোষ্ট অফিস থেকে একজনকে আনা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে একশ থেকে একশ ত্রিশ জনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়ে যাচ্ছি। অনৈতিক সুবিধার অভিযোগে তিনি বলেন, এটি সঠিক নয়। আমি আমার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে যাচ্ছি।
কটিয়াদীতে ডাকঘর সঞ্চয় পত্রের মুনাফা উত্তোলনে গ্রাহক ভোগান্তি
প্রকাশ : May 12, 2020 | Comments Off on কটিয়াদীতে ডাকঘর সঞ্চয় পত্রের মুনাফা উত্তোলনে গ্রাহক ভোগান্তি
