logo

আরও একটি বাল্য বিবাহ ক্লিন বোল্ড করলেন আক্তার জামীল ড্রেস পরিবর্তন করে ও রক্ষা পেলোনা বর

এনামুল হক কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙ্গে চলেছেন কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তরফদার মোঃ আক্তার জামীল। আজ ১৪ আগস্ট রবিবার আরও একটি বাল্য বিবাহ এর আয়োজনকে করে দিলেন ক্লিন বোল্ড। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার পুরাতন কোর্ট রোডে শ্রীনগর নামকস্থানে ওসমান গনি’র ১৫ বৎসর বয়সী সদ্য কলেজ পড়–য়া কন্যা আলেয়া সুলতানার বিয়ের আয়োজন করা হয়। বর হোসেনপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের আঃ কাদিরের পুত্র আবুল বাদশাহ।

আগামীকাল ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উদযাপনে জেলা প্রশাসনের ব্যাপক আয়োজনে কর্মব্যস্ত সময় পার করছিলেন এডিসি জেনারেল তরফদার মোঃ আক্তার জামীল। ঠিক সেই মুর্হূতে সংবাদ আসে বাল্য বিবাহের আয়োজনের। ডাকা হল সঙ্গীয় সহযোগীদের। সংবাদ দেয়া হল পুলিশ সদস্যদের। অপর প্রান্ত হতে সংবাদ আসলো ইতোমধ্যে মৌলভী সাহেব প্রবেশ করেছেন বিবাহ পড়াতে। বাড়ি ভর্তি মেহমান। সাজ সাজ রব। ঠিক ১০ মিনিটের মধ্যে হাজির হলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। দেখতে দেখতে বরবেশে হাজির আবুল বাদশাহ। সঙ্গে জনা বিশেক বরযাত্রী। এডিসি জেনারেলসহ অন্যান্যদের গাড়ি দেখে বিয়ে বাড়ির লোকজনের ধারণা হয়ত মেহমান এসেছে। কেননা তখনও পুলিশের গাড়ী অনেকটা পেছনে। কিন্তÍু বিধিবাম। মেহমান নয় হাজির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তরফদার মোঃ আক্তার জামীল। পুলিশের অভ্যর্থনায় বরের প্রবেশ। বিয়ে পড়াতে আসা স্থানীয় মসজিদের ইমাম মৌলভী নাছির উদ্দিন সটান হয়ে খাটের উপর শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সাংবাদিক, এনজিওকর্র্মীসহ আগতদের দেখে টনক নড়লো। হুজুর সুযোগ বুঝে সটকে পড়লেন জেল-জরিমানার ভয়ে। ডাকা হল কনের বাবা-মাসহ কনেকে। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল মেহেদী পরা কনে সাজে বসে আছে কনে সুলতানা। সবাই হতবিহবল। শুরু হল ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম। উপস্থিত সকলকে বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ও সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির ব্যাখ্যা ও আয়োজনের শাস্তিসহ এর বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সকলকে অত্যন্ত প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় বুঝাতে সক্ষম হলেন বাল্য বিবাহ আয়োজন সম্পূর্ণ ভুল একটি সিদ্ধান্ত, বিধি বহির্ভূত কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সবার মুখে উৎকন্ঠার ছাপ। সংঘটিত অপরাধের কি হয় শাস্তি। দু’ একজনের কন্ঠে মৃদু স¦রে কাকুতি-মিনতি। বিচারকের অনমনীয় হুকুম শাস্তি নিশ্চিত। অধীর আগ্রহ কি আসে রায়। অবশেষে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিধি বহির্ভূত বাল্য বিবাহ আয়োজন করায় কনের বাবাকে এক হাজার টাকা, বর ও বরের পিতাকে বাল্য বিবাহের সম্মতি ও অংশগ্রহণ করায় এক হাজার টাকা করে দুইজনের দুই হাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা করলেন। পালিয়ে যাওয়া মৌলভীকেও ফোনে ডেকে এনে তাকেও এক হাজার টাকা জরিমানা করা হলো এবং সেই সাথে বুঝিয়ে দেয়া হলো বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে তার করণীয়।  মজার বিষয় অবস্থা বেগতিক দেখে বর আবুল বাদশাহ তার বরবেশ পরিবর্তন করে লুঙ্গী শার্ট পরিধান করে দ্রুত বাড়ির ছাদে উঠে পড়ে যেন বর হিসাবে তাকে চেনা না যায়।

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বাল্য বিবাহ আয়োজন যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে। তার চেয়েও এই বিধি বহির্ভূত আয়োজনকে প্রতিহত করতে “জিরো টলারেন্স” নীতি অবলম্বন করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মোঃ আক্তার জামীল প্রতিনিয়ত ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলছেন। ইতোমধ্যে দুই সপ্তাহের মধ্যে সাত সাতটি বাল্য বিবাহের আয়োজন ভন্ডুল করে যথাযোগ্য শাস্তি নিশ্চিত করেছেন তিনি। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বাল্য বিবাহের কুফল ও সরকারি নীতিমালার ব্যাখ্যা প্রদান করে ইতোমধ্যেই সমস্ত জেলা জুড়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। মুখে মুখে বলে চলছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মোঃ আক্তার জামীল স্যার তো- বাল্য বিবাহ ক্লিন বোল্ড। দেখা যাচ্ছে নিরলস কর্মতৎপরতার মাধ্যমে বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে একের পর এক সফল অভিযান পরিচালনা করে নিজের সফলতার রেকর্ড নিজেই ভঙ্গ করে চলেছেন তিনি ।

Comments are closed.







প্রধান সম্পাদক : ফজলুল হক জোয়ারদার আলমগীর, সহ-সম্পাদক : দেলোয়ার হোসেন শরীফ।
বার্তা সম্পাদক - মাসুম পাঠান, প্রধান কার্যালয়: ১৩/এ মনেশ্বর রোড, হাজারিবাগ, ঢাকা- বাংলাদেশ।
জোনাল অফিস: বাংলাদেশ কম্পিউটার এন্ড টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, কটিয়াদী বাজার (অগ্রনী ব্যাংক নিচতলা), কিশোরগঞ্জ।
ফোন : ০১৭১১-১৮৯৭৬১, ০১৭১১-৩২৪৬৬০, ০১৭৩২-১৬৩১৫৭।
ই-মেইল: news@ghatanaprobaha.com, ওয়েবঃ- www.ghatanaprobaha.com
ডিজাইন: একুশে